বর্তমান সময়ে পাসপোর্ট খুবই প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। পাসপোর্ট আপনার বিভিন্ন কাজে প্রয়োজন হলেও এর সবচেয়ে সাধারণ ব্যবহার হলো এটি বিদেশ ভ্রমণের টিকিট, এর মাধ্যমে বাহিরের দেশের কাছে আপনার নিজস্ব দেশের সিটিজেনশীপ প্রদর্শন করতে পারবেন।
পাসপোর্ট দুই ধরনের হয়ে থাকে, ১. এমআরপি পাসপোর্ট (MRP/Machine Readable Passport) ও ২. ই-পাসপোর্ট (E-Passport/Electronic Passport)। আগে মানুষ এমআরপি পাসপোর্ট তৈরি করলেও এখন ই-পাসপোর্টই করে থাকেন বেশি। আর এই ই-পাসপোর্টের অনেক সুবিধাও রয়েছে। আবার এই পাসপোর্ট ইমারজেন্সি বা আজেন্ট করার প্রয়োজন হয় তাই আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আমি আপনাদেরকে জানাবো কিভাবে আর্জেন্ট অথবা ইমারজেন্সি পাসপোর্ট করার নিয়ম ২০২৩ সম্পর্কে।

আর্জেন্ট অথবা ইমারজেন্সি পাসপোর্ট করার নিয়ম
বিদেশ ভ্রমণের প্রয়োজন না হলে কেউই পাসপোর্ট তৈরি করেন না। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যে, হঠাৎ করেই কোন বিশেষ প্রয়োজনে বিদেশ ভ্রমণ করতে হয় কিন্তু পাসপোর্ট তৈরি না থাকায় অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েন কি করবেন! এতে চিন্তার কোন কারণ নেই কারণ কিভাবে আর্জেন্ট পাসপোর্ট করবেন তা জানতে পারবেন এই পোস্টের মাধ্যমে বা আর্জেন্ট অথবা ইমারজেন্সি পাসপোর্ট করার নিয়ম সম্পর্কে।
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
ব্যাবসার জন্য যারা ট্রেড লাইসেন্স করতে পারছেননা এই আর্টিকেলটা পড়ুন ট্রেড লাইসেন্স করার নিয়ম এখানে ক্লিক করুন
আর্জেন্ট অথবা ইমারজেন্সি পাসপোর্ট করার নিয়ম কি? পাসপোর্ট করার জন্য অবশ্যই কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট বা কাগজপত্র থাকতে হবে যা উল্লেখ ও কপি উল্লেখ সাপেক্ষে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যাবে। পাসপোর্ট করতে যা যা লাগবে:
- ই-পাসপোর্ট আবেদন অনলাইন কপি (অনলাইন প্রিন্ট কপি)।
- পাসপোর্ট এপ্লিকেশনের সামারি কপি (অনলাইন প্রিন্ট কপি)।
- পাসপোর্ট ফি প্রদানের মূল স্লিপ কপি।
- জাতীয় পরিয়পত্র এর ফটোকপি এবং মূল কপি।
- যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে তাদের জন্ম সনদের ইংরেজি ভার্সন।
- শিক্ষাগত সনদের ফটোকপি।
- অ্যাপয়েন্টমেন্টের প্রিন্ট কপি।
- আগের পাসপোর্ট থাকলে, তার ডাটা পেইজের ফটোকপি।
- পেশাগত সনদের সত্যায়িত ফটোকপি (যদি থাকে) [ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে পেশা সনদ লাগে না]
- নাগরিক সনদের ফটোকপি।
পাসপোর্ট অনুসন্ধান
- আমরা যখন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করি তখন এটি কতদূর এগোলো বা কি অবস্থায় আছে তা জানার প্রয়োজন হতে পারে। আর এটাকে পাসপোর্ট অনুসন্ধান বলে। আপনি ই-পাসপোর্টে আবেদন করার পর এর অবস্থা আবেদন অধিদফতরের কার্যালয়ে সরাসরি গিয়ে অথবা ঘরে
বসে অনলাইনের মাধ্যমেও তা চেক করা যাবে। পাসপোর্ট অনুসন্ধানের জন্য আপনার কিছু জিনিস প্রয়োজন হবে যেমন:
- জাতীয় পরিচয়পত্র ও NID সহ প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্টস নিজের ব্যাপারে যা দিয়ে প্রাথমিক বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান সম্পন্ন করতে হবে।
- এরপর আপনাকে ব্রাউজারে গিয়ে ই-পাসপোর্টের ওয়েবসাইটে লগইন করতে হবে www.epassport.gov.bd।
- এরপর Check Status মেন্যুতে ক্লিক করতে হবে।
- তারপর অনলাইন রেজিস্ট্রেশন আইডি অথবা এপ্লিকেশন আইডি এবং জম্ন তারিখ সঠিকভাবে দিতে হবে।
- সর্বশেষ Human verification -এ গিয়ে I am Human লেখায় টিক দিয়ে Check বাটকে ক্লিক করে পাসপোর্ট দেখতে হবে।
পাসপোর্ট করার নিয়ম ও খরচ ২০২৩
আর্জেন্ট অথবা ইমারজেন্সি পাসপোর্ট করার নিয়ম ও খরচ এই বিষয়গুলোর জন্য আপনাকে অনলাইন ব্যবহার করতে হবে। ই-পাসপোর্ট করতে হলে আপনাকে অনলাইনের মাধ্যমেই আবেদন সম্পন্ন করতে হবে। এর জন্য প্রথমে ই-পাসপোর্ট আবেদনের সরকারি ওয়েবসাইটে www.epassport.gov.bd প্রবেশ করতে হবে। সাইটে প্রবেশ করে আপনি আপনার সুবিধা অনুযায়ী ভাষা সিলেক্ট করে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন। ই-পাসপোর্ট করার মোট 5টি নিয়ম বা ধাপ রয়েছে। নিম্নে ধাপগুলি ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো:
১. আপনি যেই জেলাতে বসবাস করছেন সেই জেলায় ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম শুরু হয়েছে কিনা তা প্রথমে পরীক্ষা করুন।
২. অনলাইনে ই-পাসপোর্ট ফরম ওপেন করে তা পূরণ করুন।
৩. পাসপোর্টের জন্য নির্দিষ্ট ফি অনলাইনে ফি প্রদানের নিয়ম অনুযায়ী তা পরিশোধ করুন।
৪. ছবি তোল ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট অপশনের জন্য পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে তা সম্পন্ন করা।
৫. সর্বশেষ পাসপোর্ট অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট সংগ্রহ করা।
ই-পাসপোর্টে ফি প্রদানের নিয়ম
বাংলাদেশ সরকারের অভিবাসন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র ও তথ্যমতে, e-Passport অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে পাসপোর্টের আবেদন ফরম জমা দিলে e-Passport-এর জন্য পাসপোর্ট ফি সরাসরি অনলাইনে পরিশোধ করা যাবে। ই-পাসপোর্টে ফি প্রদানের নিয়ম হলো:
- অনলাইন পেমেন্ট সোনালী ব্যাংকের গেটওয়ে পেমেন্টের মাধ্যমে দিতে হবে।
- এর অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি হল:ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড: মাস্টারকার্ড, ভিসা, কিউ-ক্যাশ, মোবাইল ব্যাংকিং: বি-ক্যাশ, ডিবিবিএল নেক্সাস।
পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম ২০২৩
পাসপোর্ট রিনিউ করা বেশ সহজ। আপনি ব্যক্তিগতভাবে বা ডাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাসপোর্ট নবায়ন বা রিনিউ করতে পারবেন। নির্দিষ্ট কিছু ধাপ বা প্রক্রিয়া এর জন্য আপনাকে অনুসরণ করতে হবে পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য।
ধাপগুলো হলো:
- হার্ড কপিতে DS-82 ফর্মটি পূরণ করুন।
- আপনার বর্তমান পাসপোর্ট এবং পাসপোর্ট ছবি নিন।
- অ্যাপয়েন্টমেন্টের সময়সূচী নির্ধারণ করুন বা মেইলের মাধ্যমে সমস্ত ডকুমেন্টেশন পাঠান।
- পাসপোর্টের রিনিউ ফি পরিশোধ করুন।
- আপনার নতুন পাসপোর্ট আসার জন্য আপনাকে প্রায় দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।
- পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে বা চুরি গেলে দ্রুত নিকটস্থ থানায় জিডি করতে হবে। এক্ষেত্রে পুরাতন পাসপোর্টের ফটোকপি, জিডি কপিসহ আবেদন করতে হবে।
পাসপোর্ট রিনিউ করার ফি
যাদের পাসপোর্ট এক্সপায়ার ডেট প্রায় শেষের দিকে তাদেরকে পাসপোর্ট দ্রুত রিনিউ বা নবায়ন করতে হবে। পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য অবশ্যই পাসপোর্টের রিনিউ ফি পরিশোধ করতে হবে আপনাকে। এক্ষত্রে নতুন পাসপোর্ট করতে আপনার যেমন ফি পরিশোধ করতে হয়েছিল রিনিউর ক্ষেত্রেও সেই একই ফি পরিশোধ করতে হবে। পাসপোর্ট রিনিউ ফি হলো:
- ৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার পাসপোর্ট ফি ৪,০২৫ টাকা।
- ৬৪ পাতার পাসপোর্ট ফি ৬,৩২৫ টাকা।
- ১০ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার পাসপোর্ট ফি ৫,৭৫০ টাকা।
- ৬৪ পাতার পাসপোর্ট ফি ৮,০৫০ টাকা।
পাসপোর্ট নবায়ন করতে কি কি লাগে
পাসপোর্ট নবায়ন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ডকুমেন্টস প্রদর্শন করতে হবে পাসপোর্ট অধিদপতরের বরাবর। পাসপোর্ট নবায়ন করতে যেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো অবশ্যই লাগবে:
- আগের পাসপোর্ট এবং পাসপোর্টের ফটোকপি।
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদের ফটোকপি।
- পেশা সনদের ফটোকপি ও ডকুমেন্টস।
- নাগরিক সনদের ফটোকপি।
- অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদনের ফরম।
- পাসপোর্ট রি-ইস্যু ফরম।
- ফি পরিশোধ এবং ফি পরিশোধের স্লিপ।
- পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে সেই হারিয়ে যাওয়া পাসপোর্টের জিডি।
- পাসপোর্টে কোন প্রকার ভুল সংশোধন করা হলে সেই ডকুমেন্টস।
উল্লেখ্য: উপরের ডকুমেন্টসগুলো প্রয়োজন হয় এমআরপি পাসপোর্ট টু ই-পাসপোর্ট রিনিউ করতে এবং ই-পাসপোর্ট টু ই-পাসপোর্ট রিনিউ করতে।

পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম
আগে পাসপোর্টে টাকা জমা দেওয়ার সিস্টেম সোনালী বিল পেমেন্ট সিস্টেম হলেও বর্তমানে ই-পাসপোর্টের জন্য A Challan (এ চালান) যার মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে হয়। ফি পরিশোধের জন্য আপনি ব্যাংক একাউন্ট, বিকাশ ও রকেট, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড থেকে তা পরিশোধ করতে হবে।
ই-পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ার নিয়ম হচ্ছে অনলাইন। অনলাইনের মাধ্যমে আপনি যেভাবে ই-পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করবেন এর যা যা করতে হবে:
- প্রথমে Automated Challan System Bangladesh (A Challan) ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে হবে।
- তারপর ই-পাসপোর্ট ফি অপশনে ক্লিক করতে হবে।
- এবার আপনার পাসপোর্টটি কত বছর এবং পৃষ্ঠার সেই অনুযায়ী তা বাছাই করুন।
- এরপর পাসপোর্টের মেয়াদ ও ডেলিভারীরর ধরণ সিলেক্ট করুন।
- এর স্বয়ক্রিয়ভাবেই ওয়েবসাইট থেকে ফি প্রদানের অপশন আসবে ও টাকার পরিমাণ দেখাবে। এরপর OK বাটকে ক্লিক করুন।
- যার পাসপোর্টের জন্য ফি পরিশোধ করা হচ্ছে তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ডিটেইলস ফরমে লিখতে হবে ধারাবাহিকভাবে (নামের ক্ষেত্রে পাসপোর্টের সাথে মিল রেখে তা টাইপ করুন)।
- জাতীয় পরিচয়পত্র দ্বারা পাসপোর্ট করা হলে তা যেন অবশ্যই শুদ্ধ হয় আর যদি জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিয়ে করা হয় সেই নাম্বারও যেন শুদ্ধ থাকে এটা খেয়াল রাখতে হবে।
- এবার সোনারী ব্যাংকের মাধ্যমে আপনার সুবিধামতো টাকা পেমেন্টের সিস্টেম সিলেক্ট করুন। এখন Save বাটকে ক্লিক করলেই সোনালী ব্যাংকের পেমেন্ট গেটওয়েতে চলে যাবেন। সেখানে পেমেন্ট সম্পন্ন করে আবেদন শেষ করবেন।
পাসপোর্ট সংশোধন সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন
২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর সর্বশেষ জারিকৃত প্রজ্ঞাপন বা নোটিশ প্রকাশিত হয়েছে পাসপোর্ট অধিদফতর থেকে। যেখানে উল্লেখ ছিল নিম্নোক্ত বিষয়গুলো:
- বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের বাইরে অবস্থিত নাগরিকগণ NID ও Passport এর মধ্যে পার্থক্য থাকলে তা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী রি-ইস্যু বা নবায়ন করতে হবে।
- যারা অপ্রাপ্ত বয়স্ক তাদের ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী পাসপোর্ট রি-ইস্যু করতে হবে।
- যাদের এনআইডি এবং জন্মনিবন্ধন নেই তারা JSC/JDC/SSC/দাখিল/কারিগরি/উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বা সমমানের শিক্ষা সনদপত্র দেখিয়ে পাসপোর্ট সংশোধন করতে পারবেন।
সমাপ্তি: আর্জেন্ট অথবা ইমারজেন্সি পাসপোর্ট করার নিয়ম কি বা কিভাবে করবে সেই বিস্তারিত বিষয় নিয়ে সাজানো ছিল আমাদের আজকে আর্জেন্ট অথবা ইমারজেন্সি পাসপোর্ট করার নিয়ম পোস্টটি। পাসপোর্ট সংক্রান্ত খুঁটিনাটি যে বিষয়গুলো আপনার অবশ্যই জানা থাকা দরকার তা উল্লেখ করা হয়েছে পোস্টটিতে। পোস্টটি নিয়ে আপনার ব্যক্তিগত কোন মতামত বা জিজ্ঞাসা থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে জানাতে পারবেন। উপযুক্ত তথ্য দিয়ে আমরা আপনাকে সহায়তা করার চেষ্টা করবো।